সমস্ত লেখাগুলি

মাউন্ট রাধানাথের খোঁজে -
সুকৃতি দাস
Nov. 16, 2024 | ইতিহাস | views:826 | likes:48 | share: 3 | comments:0

সালটা ছিল ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ। দার্জিলিঙে তখন উত্তর- পূর্ব ভারতের পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। একদিন সকালবেলা কলোনেল অ্যান্দ্রিউ স্কটের অফিসে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলেন একজন ভারতীয় পরিগণক। তিনি প্রবেশ করা মাত্রই স্বউল্লাসে চেঁচিয়ে বললেন -” স্যার! আমি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত খুঁজে পেয়েছি। " 

প্রথমে স্কট নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। কারণ তখন কাঞ্চনজঙ্ঘাই  ছিল পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত। তিনি ওই ভারতীয় পরিগণকের কাছে বিশদে এই বিষয়ে জানতে চাইলেন। তখন ওই ভারতীয় পরিগণক ওনার সামনে মেলে ধরলেন তার গণনার হিসাব। নিপুণ এই গণনা অনুযায়ী ওই উচ্চতম মাউন্টেনের উচ্চতা হল ২৯০০০ ফুট যা কাঞ্চনজঙ্ঘার থেকে অনেকবেশি। কিন্তু স্কট এই উচ্চতার সাথে আরও ২ ফুট যোগ করে প্রকাশ করলেন এই মানকে আরো বিশ্বাসযোগ্য বানানোর জন্য। 

১৮৫৬ সালে প্রকাশিত হল এই পর্বতের কথা। স্কট এই পর্বতের নাম দিলেন তার পূর্বসূরি কলোনেল এভারেস্টের নাম অনুসারে মাউন্ট এভারেস্ট। সম্মান ঝাঁপিয়ে পড়ল স্কটের উপর। ওই বছরই  রয়্যাল জিওগ্র্যাফিকাল সোসাইটি তাকে ভূষিত করলেন স্বর্ণ পদক দিয়ে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি নির্বাচিত হলেন রয়্যাল সোসাইটির সদস্য হিসাবে। কিন্তু যিনি প্রথম এই পর্বতের উচ্চতা গণনা করেছিলেন। সেই ভারতীয় পরিগণকের নাম রয়ে গেল অন্ধকারে। 


কিন্তু কে ছিলেন এই ভারতীয় পরিগণক ? 


তিনি হলেন রাধানাথ শিকদার। ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিতুরাম শিকদার এবং দেবকী শিকদারের কোল আলো করে জোড়াসাঁকোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই অসাধারণ মেধা ও বুদ্ধিযুক্ত গণিতবিদ রাধানাথ শিকদার। 

যে কৈশোরে কিশোরদের হাতে শোভা পায় ডাঙ্গুলি আর ঘুড়ি। সেই সময়ে তিনি ডুবে থাকতেন  ইউক্লিডের জ্যামিতি, থমাস জেপ্সনের অ্যানালাইটিকাল জ্যামিতি, ওয়াইন্ডহাউসের অ্যাস্ট্রোনমি বইয়ের পাতায়। সেই বয়সেই তিনি আবিষ্কার করেছিলেন  দুটি বৃত্তের সাধারণ স্পর্শক আঁকার নয়া পদ্ধতি। 


কর্মক্ষেত্রের শুরু  


১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে কলোনেল জর্জ এভারেস্ট হন্যে খুঁজছিলেন এমন এক গণিতবিদকে যার কাছে স্ফেরিক্যাল ত্রিকোনামিতি একদম জলভাতের মতো পরিষ্কার। গ্রেট ট্রিগোনামেট্রিক সার্ভের দ্বারা ভারত ও ভারত সংলগ্ন অংশের নিপুণ পরিমাপ করার জন্য এমন গণিতবিদের বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। অবশেষে অধ্যাপক জন টাইটেলার তাকে হদিস দিলেন তার ছাত্র রাধানাথ শিকদারের। এরপর তার পরামর্শ মতো রাধানাথকে পরিগণকের কাজে নিযুক্ত করলেন জর্জ এভারেস্ট। 

প্রথমে কাজের সূত্রে তাকে পাঠানো হল দেরাদুনে। সেখানে তিনি তার কাজের মাধ্যমে মুগ্ধ করে দিলেন সবাইকে। তিনি তার গণনার কাজে প্রথাগত গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন না। তার নব্য আবিষ্কৃত গণনা পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি খুব দ্রুত আর নির্ভুলভাবে করে দিতেন সব গণনার কাজ। 

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে জর্জ এভারেস্টের পরিবর্তে কাজে নিযুক্ত হলেন  অ্যান্দ্রিউ স্টার্ট।  ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে একজন ত্রিরিশ টাকা বেতনভোগী পরিগণক থেকে রাধানাথ শিকদারকে উন্নীত করা হল প্রধান পরিগণকের পদে। তিনি হলেন আবহাওয়া দপ্তরের অধীক্ষক। সেই সময় কলোনেল অ্যান্দ্রিউ স্টার্টের নির্দেশে তিনি পর্বতের উচ্চতা গণনার কাজ শুরু করলেন এবং তিনি গণনা করলেন উচ্চতম পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা। 


 অন্যান্য কর্মকাণ্ড 


রাধানাথ শিকদার শুধু একজন গণিতবিদ ছিলেন না। তার জনহিতকর কাজের বহু নিদর্শন রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। 

ম্যাজিস্ট্রেট ভ্যান্সিটারটের অত্যাচারে নিষ্পেষিত অসহায় সার্ভে শ্রমিকদের কষ্টে কেঁদে উঠেছিল তার মন। তিনি এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলেন স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে। তার জন্য শাস্তিস্বরূপ তাকে দিতে হয়েছিল ২০০ টাকা জরিমানা। সেই সময় তার মাসিক রোজগার ছিল মাত্র ৩০ টাকা। 

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধু প্যারিচাঁদ মিত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে শুরু করেছিলেন মাসিক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি প্রচার করেছিলেন নারীশিক্ষার কথা। 


জীবনের শেষ দিনগুলো কাটি‍য়েছিলেন জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশনের (বর্তমানে স্কটিশ চার্জ কলেজ) শিক্ষক হিসাবে। অবশেষে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চলে গেলেন অমৃতলোকে। 

২০০৪ সালে তাঁর নামাঙ্কিত পোস্টাল ষ্ট্যাম্প ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। কিন্তু জীবিতকালে সেই অর্থে সম্মান পায়নি তার অবিস্মরণীয় প্রতিভা। 

হয়ত ভারতবর্ষ সেই সময়ে স্বাধীন থাকলে আজকে মাউন্ট এভারেস্টের নাম হত - মাউন্ট রাধানাথ। 


তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933